প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। এ কারণে জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। কাজেই আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না। দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিও কেউ রুখতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১-এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এটি দেশর প্রথম পাতাল রেল এবং দ্বিতীয় মেট্রোরেল।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাতাল রেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হলো এবং পাতাল রেলের নবযাত্রা শুরু হলো।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি কেউ রুখতে পারবে না। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই। গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশাল্লাহ, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।
বিএনপির ছেড়ে দেওয়া সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভোট পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এত বছর মানুষের জন্য কাজ করায় তারা ভোট দিচ্ছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমাদের ওপর আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেটা করতে সমর্থ হয়েছি। এ পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমরা জনগণের সেবা করতে এসেছি, জনগণের সেবক। আমরা জনগণের ভাগ্য তৈরি করতে এসেছি, তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আসিনি। আমরা জনগণকে দিতে এসেছি, তাই এখানে দুর্নীতির প্রশ্ন আসে না।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল ঢাকা যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে মেট্রোরেল চালু করা। আমরা সেটা করেছি। সেটি ওপর দিয়ে যাবে। এবার মাটির নিচ দিয়ে যাবে পাতাল রেল। বাংলাদেশে এ ধরনের আয়োজন প্রথম। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক অর্জিত হলো।’
পাতাল রেলের নির্মাণকাজ করার সময় জনগণের চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাটির নিচে শব্দহীন বোরিং মেশিন দিয়ে গর্ত করে টানেল করা হবে। ভূপৃষ্ঠের ১০ মিটার নিচে কাজ করা হবে। তাই ওপর থেকে বোঝা যাবে না যে মোটির নিচে কাজ চলছে। প্রকল্পটি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব হবে এবং জনগণের যেন কোনো অনুবিধা না হয় নির্মাণকাজে, সেটিও খেয়াল রাখা হবে।’
রাজধানীতে মোট ছয়টি মেট্রোরেল হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ লাইনগুলো করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ফিজিবিলিটি স্টাডিও শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে তিনটি মেট্রোরেল লাইন করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে অনেক কাজ হচ্ছে। তিনটি ফাস্ট ট্র্যাকসহ ৪৬টি ছোট-বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন করা হবে, এতে বিনিয়োগ করবে জাপান। এর মাধ্যমে এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’
রূপগঞ্জে নতুন শহর পূর্বাচল গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পূর্বাচল একটি স্মার্ট সিটি হবে। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরকে আমরা স্মার্ট সিটি হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সারা দেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। সারা দেশে একই দিনে ১০০ সেতু এবং ১০০ সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণ করেছে, যেটা বোধহয় কখনো কেউ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত মেট্রোরেলের কাজে যুক্ত সাত জাপানি পরামর্শককে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তাদের স্মরণে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ উদ্যোগে উত্তরা দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্যকেন্দ্রে স্মৃতিস্মারক স্থাপন করা হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে এমআরটি লাইন-১ এবং এমআরটি লাইন-৫ : নর্দার্ন রুটের নতুনবাজার আন্তঃলাইন সংযোগ স্টেশনে স্থানান্তর করা হবে বলে তিনি জানান। ওই ঘটনার পরও জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শিনজো আবে এবং দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক; বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং বাংলাদেশে জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুছি তোমোহাইড। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী স্বাগত বক্তব্য দেন। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে এমআরটি লাইন-১-এর ওপর একটি ভিডিও চিত্র এবং প্রকল্পের ওপর এটুআই নির্মিত একটি ‘থিম সং’ পরিবেশিত হয়।
প্রকল্প সূত্র জানায়, সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং পূর্বাচল থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত মাটির নিচ দিয়ে এবং এলিভেটেড উভয় সুবিধা সংবলিত ৩১ দশমিক ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করবে। এর দুটি অংশ থাকবে-একটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত (বিমানবন্দর রুট) ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার।
এটি হবে ভূগর্ভস্থ এবং এতে ১২টি স্টেশন থাকবে। অপর অংশটি নতুনবাজার থেকে প্রায় ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার এলিভেটেড লাইনসহ পূর্বাচল পর্যন্ত (পূর্বাচল রুট)। এতে সাতটি স্টেশন থাকবে। অন্যদিকে বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসাবে নতুনবাজার এবং নদ্দা স্টেশন হবে ভূগর্ভস্থ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।